নাশকতার কর্মসূচি দিয়ে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের নেতা-কর্মীদের সমর্থনও হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীয় সংসদে বুধবার তিনি বলেন, “তার (খালেদা জিয়া) দলের নেতা-কর্মীরাও এখন তার সঙ্গে নেই।”

এর আগে খালেদা জিয়ার ডাকা অবরোধে নাশকতা এবং আদালতে তার না যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

খালেদা জিয়ার কর্মসূচি বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বিএনপি-জামাত নেত্রী যে দাবি-দাওয়া দিয়েছেন, তা সবই তার নিজের ও পুত্রের জন্য। তাই জনগণ এখন তাকে একেবারেই সমর্থন করে না, বরং জনগণ ক্ষুব্ধ।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি লাগাতার অবরোধ ডাকেন খালেদা জিয়া। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় লাগাতার হরতালও ডাকা হচ্ছে।

সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিএনপি জোটের কর্মসূচির মধ্যে নাশকতায় গত ৬৪ দিনে ১১৯ জন মানুষ মারা গেছেন, যাদের অধিকাংশের মৃত্যু ঘটেছে পেট্রোল বোমা কিংবা গাড়িতে দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে। এছাড়া পেট্রোল বোমাসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কাজে সহস্রাধিক ব্যক্তি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন

এই সময়ে ছয়টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ এবং ৩৪ দফা ট্রেনে নাশকতা চালানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

নাশকতার মুখে বিএনপির দাবি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি এখন রাজনৈতিক আন্দোলনে নেই, বরং জঙ্গিবাদী তৎপরতায় লিপ্ত।

শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি-জামাত নেত্রী আন্দোলনের নামে অফিসে বসে নাশকতামূলক কাজ করছে। সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করছে। দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছেন।

“মানুষ ঘৃণাভরে জ্বালাও-পোড়াও এবং পেট্রোল ঢেলে মানুষ হত্যা প্রত্যাখ্যান করেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথার্থ পদক্ষেপ না নিলে বহু আগেই জনগণ খালেদা জিয়াকে গুলশানের কার্যালয় থেকে বের করে দিত।”

দুর্নীতির মামলায় আদালতে উপস্থিত না হয়ে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

“বেগম খালেদা জিয়া কোর্টের আদেশ অমান্য করে অত্যন্ত খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আর আইনকে সমুন্নত রাখা সরকারের দায়িত্ব।”

জিয়া ট্রাস্টের দুই মামলায় খালেদার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

শেখ হাসিনা বলেন, “কোর্ট থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে দেশের যে কোনো নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে কোর্টে আত্মসমর্পণ করা। আর দায়িত্বশীল নাগরিক অতি দ্রুততার সঙ্গে কোর্টের আদেশ মান্য করবেন, এটাই সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত।”

২০ দলের কর্মসূচির ফলে সৃষ্ট সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সরকার সচেষ্ট বলেও সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী।

“এ নৈরাজ্য দীর্ঘদিন চলতে দেওয়া যায় না। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে তৎপর আছে। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আরও কঠোর হবে। দেশের মানুষ শান্তি প্রিয়, তারা চায় শান্তিতে বসবাস করতে।”

জনজীবন নির্বিঘ্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও আধুনিক এবং তার কলেবর বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার ফলে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মাত্রা অনেক কমে এসেছে। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বাস ও ছোট ছোট যানবাহনও স্বাভাবিকভাবে চলছে। হরতাল ও অবরোধের দিনে ঢাকাবাসীকে প্রচণ্ড যানজটের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

তবে দূরবর্তী এলাকায় বাস কিছুটা কম চলছে বলে স্বীকার করেন সরকার প্রধান।