স্বামীর সন্ধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইবেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী। খালেদা জিয়ার সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি।

আট দিন ধরে স্বামীর কোনো খবর না পেয়ে উদ্বিগ্ন হাসিনা আহমেদ। তার সন্তানরাও বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অজ্ঞাত স্থান থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপির নামে বিবৃতি পাঠিয়ে আসা সালাহ উদ্দিনকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে গোয়েন্দা পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে তার পরিবারের অভিযোগ।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ নাকচ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে তাকে আটক করতে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

হাসিনা মঙ্গলবার তার গুলশানের বাসায় সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা অস্বস্তিকর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। আমার স্বামীকে ফিরে পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আবেদন জানাব শিগগিরই।”

২০১২ সালে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তার হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। ইলিয়াস অন্তর্ধান রহস্যের মীমাংসা তিন বছরেও হয়নি।

সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে বের করতে পুলিশ তৎপর বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দাবি করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তার স্ত্রীর।

“আমার স্বামীকে ফিরে পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বাত্মক সহযোগিতা পাচ্ছি না। এই আট দিনের মধ্যে গতকাল (সোমবার) সিটি এসবির একজন সাব ইন্সপেক্টর আমার সঙ্গে দেখা করেছে মাত্র।”

রাতে দুই সন্তানকে নিয়ে গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন কক্সবাজারে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা।

সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ম্যাডাম বাচ্চাদের আদর করেছেন, কথা-বার্তা বলেছেন।

“যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে, ম্যাডাম সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন অবিলম্বে তাকে আদালতের হাজির করে অথবা আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়।”

হাসিনার সঙ্গে ছিলেন ছোট ছেলে সৈয়দ ইউসুফ আহমেদ ও ছোট মেয়ে ফারিবা আহমেদ রাইদা এবং নিজের ভাইয়ের স্ত্রী শামীম আরা। তার বড় ছেলে সৈয়দ ইব্রাহিম আহমেদ কানাডা এবং বড় মেয়ে পারমিজ আহমেদ ইকরা মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করেন।

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন এবং ২০০১ সালে তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির আন্দোলনের সময় একবার সালাহ উদ্দিন এবারের মতোই কর্মসূচি জানিয়ে বিবৃতি দিয়ে আসছিলেন। তখনও তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, কিছু দিন কারাগারেও ছিলেন।

তবে এবার তাকে আটকের খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্বীকারের পাশাপাশি বিষয়টি ‘রহস্যময়’ বলে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

হাসিনা আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “স্বামী নিখোঁজের পর থেকে আমার ঘরে কোনো রান্না-বান্না হয় না। পাশের বাসার ভাবিরা রান্না করে খাবার পাঠায়। বাচ্চারা কিভাবে আছে, কী খায়, কিছুই বলতে পারি না।”

“আমার স্বামী যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, তাহলে আদালতে হাজির করে তার বিচার করুন,” সরকারের উদ্দেশে বলেন তিনি।

সোমবার রাতে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ সান্ত্বনা দিতে গেলে স্কলাস্টিকা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী রাইদা কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, “আমার একটাই আবেদন, আব্বুকে সুস্থ অবস্থায় যেন ফেরত দেওয়া হয়। এটাই আমার চাওয়া।”

হাসিনা বলেন, “বিদেশে আমার বড় ছেলে ও মেয়েও কিছুক্ষণ পরপর টেলিফোন করে বাবার সন্ধান জানতে চায়। আমি কিছুই বলতে পারি না।”

উত্তরার একটি বাসায় সালাহ উদ্দিন ছিলেন বলে তার স্ত্রীর দাবি। তিনি বলেন, গভীর রাতে সেখান থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়।

সালাহ উদ্দিন আহমেদ

সালাহ উদ্দিন আহমেদ

স্বামীর খোঁজ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করেছেন হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেনি। আগামী ৮ এপ্রিল হাই কোর্টে ওই আবেদনের শুনানির তারিখ রয়েছে।

বিএনপি সমর্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা সালাহ উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে সান্ত্বনা জানিয়ে আসছেন। স্বামীর সন্ধানে নাগরিক সমাজসহ দেশবাসীকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন হাসিনা।

মঙ্গলবার অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের নেতৃত্বে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) একটি প্রতিনিধি দল সালাহ উদ্দিনের বাসায় যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ইউসুফ হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এ ঘটনায় স্তম্ভিত। এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আট দিন ধরে একজন মানুষের খোঁজ পাওয়া যাবে না, কোনো সভ্য দেশে তা হতে পারে? আমরা সরকারকে বলব, তাকে দ্রুত খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা নিন।”