নিজের দলে প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীদের ‘শায়েস্তা’ করতে বিএনপির সহায়তা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে।

সোমবার নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হয়।

অভিযোগের সপক্ষে একটি ভিডিও দেখিয়েছেন নিউ ইয়র্ক আওয়ামী লীগের নেতারা, যাতে সিদ্দিকুর রহমানকে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির এক সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়।

ভিডিওতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সংবাদ সম্মেলনস্থলে সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে তার সমর্থক কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে দেখা যায়।

ভিডিওতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাটকে বলতে শোনা যায়, “কথা হয়ে গেছে। কথা শেষ। উনারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে যে, উনারা বাদে কেউ যদি আওয়ামী লীগের নাম নিয়ে আসে তাহলে তাদেরকে বান্দে (বেঁধে) রেখে দেব।”

এরপর সিদ্দিকুরের সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্য থেকে বলা হয়, এটাই শেষ কথা। তারপর সিদ্দিকুরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতারা সবাই ওই স্থান ত্যাগ করেন।

দলের যুক্তরাষ্ট্র সভাপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের সাথে আঁতাত করে সিদ্দিকুর রহমান আমাদের শায়েস্তা করতে চান।

“আমরা তার (সিদ্দিকুর) অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করি বলে আমাদেরকে বিএনপি-জামায়াত দিয়ে শায়েস্তার ষড়যন্ত্র করছেন তিনি।”

তবে সিদ্দিকুর তার বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগের বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক।

প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্রকারী রিজভী আহমেদ সিজার বিএনপির ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হবেন বলে খবর পেয়ে সেখানে যান সিদ্দিকুর।

অন্যদিকে বিএনপি সংবাদ সম্মেলনস্থলের প্রবেশ পথে অবস্থান নেন নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারাও। সিজারকে দেখলেই ধাওয়া দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

ওই সময় সিদ্দিকুরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সরাসরি ঢুকে যান বিএনপির সংবাদ সম্মেলনস্থলে। সেখানেই বিএনপি নেতা আব্দুল লতিফ সম্রাটের সঙ্গে কথা হয় তাদের।

সংবাদ সম্মেলনে নূরনবী কমান্ডার যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে বলেন, সিদ্দিকুর অযাচিতভাবে নিউ ইয়র্ক মহানগর কমিটির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন।

নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার

নিউ ইয়র্ক আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাকারিয়া চৌধুরীকে অব্যাহতির নোটিস দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এর আগেও যারাই তার (সিদ্দিকুর) অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছে, তাদেরকেই বহিষ্কারের নোটিস দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সভানেত্রীর (শেখ হাসিনা) ধমকে ওই সব বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছেন।”

সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসিব মামুন ও মহিউদ্দিন দেওয়ান এবং প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম ছিলেন। এই তিনজনকে সিদ্দিকুর বহিষ্কারের নোটিস দিয়েছিলেন, পরে তা প্রত্যাহার হয়।

নূরনবী দাবি করেন, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মতোই নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়। ফলে এই কমিটির কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার কেবল শেখ হাসিনার।

তবে সিদ্দিকুর বলেন, “সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমার স্বাক্ষরেই নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়েছে। তাই ওই কমিটির কাউকে বহিষ্কার/অব্যাহতির ক্ষমতা আমার রয়েছে।”

নূরনবী বলেন, “সংগঠনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের আগে যে সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা দরকার, তার কোনোটিই তিনি জানেন না। সাংগঠনিক রীতি সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান থাকলে এ ধরনের তৎপরতায় লিপ্ত হতে পারতেন না তিনি (সিদ্দিকুর)।”

“যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে স্বৈরাচার ভর করেছে। স্বৈরাচারমুক্ত না হতে পারলে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।”

নোয়াখালী অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরনবী দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দণ্ডিত সিজারের বাবা নোয়াখালীর মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন যে একাত্তরে রাজাকার ছিলেন, সে তথ্য প্রকাশ করায় মামুনের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে।

“তাই কি আমরা সিদ্দিকুর রহমানের রোষানলে পড়েছি?”

সিদ্দিকুরের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তুলে নূরনবী বলেন, “এর আগে তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। কথায় কথায় হাই কমান্ডের দোহাই দিয়ে সহজ-সরল কর্মীদের বিভ্রান্ত করেন তিনি।”

নূরনবীর সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে থাকা সবাই সিদ্দিকুরের সমালোচনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন নিউ ইয়র্ক রাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নূরুজ্জামান সর্দার, সহসভাপতি দরুদ মিয়া রনেল, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের মিয়া, প্রজন্ম একাত্তরের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি শিবলী সাদিক শিবলু, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভানেত্রী মুর্শেদা জামান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন পরিষদের নেতা শরাফ সরকার, নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মিনহাজ শরীফ রাসেল ও সহসভাপতি মাসুদ হোসেন সিরাজি, ব্রুকলিন আওয়ামী লীগের নেতা ইসমত হক খোকন প্রমুখ।