সংবাদ সম্মেলনে খালেদা
দল ও জোটের অবস্থান তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন খালেদা জিয়া ।
শুক্রবার বিকাল ৪টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হবে বলে তার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “চলমান পরিস্থিতিতে দল ও জোটের অবস্থান ব্যাখ্যা করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরবেন।”
কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, কার্যালয়ে তল্লাশির পরোয়ানা আর নাশকতা বন্ধে বিভিন্ন মহলের আহ্বানের মধ্যে সাংবাদিকদের সামনে আসতে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
৫ জানুয়ারি ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে দুই মাসের বেশি সময় ধরে কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা জিয়া গত ২৭ জানুয়ারির পর এই প্রথম সাংবাদিকদের সামনে আসছেন। তার আগে ১৯ জানুয়ারি সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
২৭ জানুয়ারি ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে শেষ বিদায় দিতে কার্যালয়ের দোতলা থেকে নিচে নেমেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তারপর তিন দফায় কূটনীতিকদের সঙ্গে তার যে বৈঠক হয়েছে, তা দোতলায়ই হয়েছে।
৩ জানুয়ারি রাতে কার্যালয় থেকে বের হতে বাধা পেয়ে সেখানে অবস্থান নেন তিনি। ৫ জানুয়ারি ফের পুলিশের বাধা পেয়ে সারাদেশে লাগাতার অবরোধ ডাকেন তিনি, যা এখনও চলছে। তার সঙ্গে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চলছে হরতালও।
ওই সময় গুলশান ২ নম্বরের ৮৬ নম্বর সড়কে খালেদার ওই কার্যালয় অবরুদ্ধ করে ফেললেও পরে পুলিশ বেষ্টনি তুলে নেওয়া হয়।
মালয়েশিয়া থেকে কফিন আসার পর ওই কার্যালয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের যাতায়াত অবাধ হলেও ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের ওই কার্যালয়ে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ শুরু করে পুলিশ। সেই সঙ্গে কেটে দেওয়া হয় কেবল টিভি ও ইন্টারনেট সংযোগ।
মাঝে একবার খালেদার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় ১৮ ঘণ্টার জন্য। তার খাবার নিয়ে স্বজনদের ঢুকতে দিলেও অন্য কারও খাবার সেখানে ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ।
কার্যালয়ে অবস্থানের মধ্যে অবরোধে নাশকতার কয়েকটি মামলায় হুকুমের আসামি করা হয় খালেদাকে। একটি মামলায় তার কার্যালয়ে তল্লাশি চালাতে আদালতের পরোয়ানাও হয়েছে।
অন্যদিকে আদালতে গরহাজির থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। সেই পরোয়ানা গুলশান থানায় পৌঁছামাত্র তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।
গত ৬৪ দিনে লাগাতার অবরোধ-হরতালে নাশকতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে পেট্রোল বোমা কিংবা গাড়িতে আগুনে পুড়ে।
এই নাশকতার জন্য খালেদাকে দায়ী করে তার বিচার দাবি করে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। সেই বিচারের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী; যদিও বিএনপি নাশকতার দায় অস্বীকার করছে।
বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে এই কর্মসূচি শুরু করলেও নাশকতার মুখে তাদের দাবিতে নত হওয়া কিংবা তাদের সঙ্গে সংলাপে বসতে অস্বীকার করছে আওয়ামী লীগ।
চলমান অস্থিরতা নিয়ে বিদেশিদের নানা তৎপরতায় নাশকতা বন্ধের আহ্বানটিই আগে আসছে; ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সফররত একটি প্রতিনিধি দল খালেদার সঙ্গে দেখা করে সহিংসতা বন্ধের কথাই আগে বলেছেন।
লাগাতার-হরতাল অবরোধে বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি ও গাড়ি পোড়ানো চললেও এসএসসি পরীক্ষা পেছানো ছাড়া জনজীবনে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব এখন আর দৃশ্যমান নয়।
গত ১৯ জানুয়ারি সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া
খালেদার কার্যালয়ের বাইরের চিত্র
কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের সক্রিয় তৎপরতা চোখে যেমন পড়ছে না, তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বিএনপির প্রতি সমর্থনও দৃশ্যমাণ নয়।
এর পাশাপাশি কোকোর মৃত্যুর পর সমবেদনা জানাতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে ফটক থেকে ফিরিয়ে দেওয়া নিয়েও সমালোচনায় পড়তে হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনকে।
এর মধ্যেই শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে আসতে যাচ্ছেন খালেদা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে সংসদের বাইরে থাকে এখন অনেকটাই নাজুক পরিস্থিতিতে তিনি কী বলেন, সে দিকে চোখ থাকবে রাজনৈতিক মহলের।
0 Comment