পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা তারল্য সঙ্কট। এ সঙ্কট দূরীকরণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা পুঁজিবাজার। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে ফিরলেও তা যথেষ্ট নয়। এদিকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোও ব্যাংকের বিনিয়োগের ভরসায় রয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে ফিরলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোও বিনিয়োগে ফিরবে এমন পরিকল্পনা বেশিরভাগ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের। তবে বাজারে ইতিবাচক গতি ফেরাতে ব্যাংক নির্ভরতা কমাতে হবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ মিউচ্যুয়াল ফান্ডই বর্তমানে বিনিয়োগ থেকে বিরত রয়েছে। দু-একটি ফান্ড বিনিয়োগে থাকলেও তা পরিমাণে অল্প। পুঁজিবাজারের তারল্য সঙ্কট দূরীকরণে এ মূহুর্তে বিনিয়োগে ফেরা প্রয়োজন জেনেও তারা বিনিয়োগে ফিরছেনা। অথচ এমন সঙ্কটের সময় বাজারকে সামাল দেয়ার জন্যই এসব ফান্ডকে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। ফান্ডগুলো পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য। অব্যাহত দর পতনের কারণে বেশিরভাগ শেয়ারের দর তলানিতে গিয়ে ঠেকলেও ফান্ডগুলো বিনিয়োগে ফিরছে না। ধসের সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে তারা কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে কয়েকটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সাথে কথা বললে বিনিয়োগে না ফেরা সম্পর্কে তারা আস্থার সঙ্কটকে দায়ী করেন। তাদের মতে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মত আমরাও আস্থার সঙ্কটে ভুগছি। বিনিয়োগ করে লোকসানের ভয়ে বিনিয়োগ করতে পারছিনা। পাশাপাশি গত কয়েক বছর মন্দা বাজারের কারণে আমাদের আগের বিনিয়োগ আটকে গেছে। বেশিরভাগ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এসেট ভ্যালু কমে গেছে। যে কারণে কয়েকটি ফান্ড বছর শেষে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। তাই নতুন করে বিনিয়োগে ফেরার জন্য অনেক হিসাব করতে হচ্ছে। কারণ আমরা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিনিয়োগ করে থাকি। ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিষয়টি অন্যরকম। তারা একটা নির্দিষ্ট পরিমান বিনিয়োগ কারো ইচ্ছে ছাড়াই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।

ফান্ডগুলোর মূল ব্যবসাই হচ্ছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা। বাজারে বেশিরভাগ শেয়ারের দরই এখন বিনিয়োগযোগ্য। তারপরও বিনিয়োগে না ফেরার পেছনে একমাত্র কারণ আস্থার সঙ্কট। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে ফিরলে বাজারে তারল্য বাড়বে পাশাপাশি মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোও বিনিয়োগে ফিরবে বলে মনে করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের পরিচালক বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অন্যতম উদ্দেশ্য মুনাফা করা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও একই উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করে থাকে। তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থার সঙ্কট থাকলে বিনিয়োগ না করাটাই স্বভাবিক। ব্যাংগুলো বিনিয়োগে ফিরলে পুরো বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তখন মিউচ্যুয়াল ফান্ড মার্চেন্ট ব্যাংক সবাই একযোগে বিনিয়োগে ফিরবে বলে অশা করা যায়।

এ প্রসঙ্গে বেশকিছু অর্থনীতির অধ্যাপক বলেন, পুঁজিবাজার হচ্ছে একটি দেশের অর্থের অন্যতম উৎস। এখান থেকে দেশের যে কোনো উন্নয়নে অর্থ ব্যবহার করা হবে এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানিসহ ব্যাংকগুলোও অন্তর্ভূক্ত। অথচ বর্তমানে আমাদের দেশের পুঁজিবাজার অনেকটা ব্যাংক নির্ভর হয়ে পড়েছে। পুঁজিবাজারের ইতিবাচক গতি ক্ষেত্রে যা একটি বড় বাধা। পুঁজিবাজার থেকে সঠিক সুফল পেতে হলে ব্যাংক নির্ভরতা কমাতে হবে বলে মনে করেন তারা।