ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতীক্ষিত বৈঠকে তার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া স্থল সীমান্ত চুক্তি ও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়েও কথা হয়েছে। দুজনের একান্ত বৈঠকেই বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছিল বলে জানা গেছে। তবে এই একান্ত বৈঠক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যেমন কিছু জানান নি, তেমনি মমতাও কিছু জানান নি। বরং সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন। গতকাল দুপুরে সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর ঘরে মোদির সঙ্গে মমতার প্রায় ২০ মিনিট একান্তে বৈঠক হয়। এই বৈঠকের পরই সংসদের লাইব্রেরির কনফারেন্স রুমে মমতাসহ তৃণমূল সংসদ সদস্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে মমতা জানান, পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতির কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী সমস্যা সমাধানের চেষ্টার আশ্বাস দিয়েছেন বলে মমতা দাবি করেন। গত নয় মাসে এই প্রথম মোদির সঙ্গে মুখোমুখি কথা হয়েছে মমতার। ভারতের ক্ষমতায় মোদির অধিষ্ঠান হওয়ার পরও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মোদিকে কোনও শুভেচ্ছা জানান নি। এমনকি যোজনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনাতেও তিনি যোগ দেন নি। তবে হঠাৎ করে সুর বদল করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যের ঘাড়ে চেপে থাকা ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য গত মাসে মমতা চিঠি দেন। আর এরই ফলে গতকালের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত  হয়েছে। তবে রাজ্যের ঋণ সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলেও এই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও আলাদাভাবে আলোচিত হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে গিয়ে মমতা সীমান্ত ও তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। যাওয়ার আগে অবশ্য ভারত সরকারের সবুজ সংকেত তিনি পেয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন। সফর থেকে ফিরে ভারত সরকারকে চিঠি লিখে এ সফর যে সফল হয়েছে তাও তিনি জানিয়েছিলেন। মোদিও মমতার ঢাকা থেকে ফিরে আসার পরদিনই সংসদে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ডেরেক ও ব্রায়েনের কাছে সফরের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তার পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই দুটি দেশ সফর করেছেন। এরপর শ্রীলঙ্কা ও আরও কয়েকটি দেশ সফর করবেন এ সপ্তাহেই। কিন্তু বাংলাদেশ সফরে তিনি আগ্রহী হলেও কোন চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেই সফরে যেতে রাজি নন। আর তাই মমতাকে সঙ্গে নিয়েই তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত তৈরি করতে চাইছেন। মমতাও গত কয়েক মাসে সুর অনেকটাই বদল করেছেন। তিনিও বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছেন। তিস্তা নিয়েও সহযোগিতার কথা বলেছেন। এদিন মোদির সঙ্গে বৈঠকে মমতা সে কথাই মোদিকে সামনাসামনি জানিয়ে এসেছেন বলে জানা গেছে।