সাংবাদিকের ওপর হামলায় ছাত্রলীগ
চট্টগ্রামে নাশকতাবিরোধী সমাবেশে মন্ত্রীর বক্তব্য চলার সময়ই সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।
বুধবার বিকালে লালদীঘি মাঠে ১৪ দল আয়োজিত কর্মসূচিতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য চলাকালে এই ঘটনা ঘটে।
এসময় একটি বেসরকারি টেলিভিশনে মন্ত্রীর বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছিল।
আক্রান্ত সাংবাদিকরা বলেন, মন্ত্রীর বক্তব্যের সময় ক্যামেরার সামনে গিয়ে শ্লোগান দিতে নিষেধ করায় ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী চড়াও হয়। তারা চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরা ভেঙে ফেলে।
হামলায় আহত হন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের দুই সাংবাদিকসহ সেখানে থাকা কমপক্ষে ছয়জন সংবাদকর্মী।
এই পরিস্থিতি দেখে মঞ্চ থেকে নেমে এসে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের থামান।
পরিস্থিতি শান্ত হলে নিজের বক্তব্যের বাকি অংশ দেওয়ার সময় এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের।
হামলাকারীরা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী বলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক বলেন, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মঞ্চে বক্তব্য শুরু করেন প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের। তখন মঞ্চের ডান পাশে নিচে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের আলোকচিত্রী ও প্রতিবেদকরা অবস্থান নিয়ে তার বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করছিল।
মন্ত্রীর বক্তব্যের শুরু থেকেই নগর ছাত্রলীগের দুই পক্ষ নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী আ জ ম নাছির মঞ্চে ছিলেন। ওমরাহ পালনে বিদেশে থাকায় ছিলেন না মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনিও মেয়র নির্বাচন করতে আগ্রহী।
মন্ত্রী যখন দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন, তখনও নেতাদের নামে উচ্চস্বরে স্লোগান দিচ্ছিল ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।
এসময় চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সরাসরি সম্প্রচার চলছিল। চিত্রগ্রাহক শফিক সাজীব এসময় ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিলে সমস্যা হয় বলে জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সেখানে থাকা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।
শফিক সাজীব বলেন, “ছাত্রলীগের এই অংশের নেতাকর্মীরা বলে- ‘তুই মনে হয় মহিউদ্দিন চৌধুরীর দালাল’। এরপরই আমাকে মারপিট শুরু করে।”
বাধা দিতে গেলে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদক জামশেদুল করিমও হামলার শিকার হন। হামলাকারীরা ক্যামেরা ও ট্রাইপড ভেঙে ফেলে।
সহকর্মীদের বাঁচাতে এসে ছাত্রলীগকর্মীদের হামলার মুখে পড়েন একাত্তর টেলিভিশনের ক্যামেরামান জহিরুল ইসলাম, চ্যানেল নাইনের ক্যামেরামান বিপ্লব মজুমদার, বাংলাভিশনের সাইফুল ইসলাম ও সময় টেলিভিশনের প্রতিবেদক পার্থ।
তখন মঞ্চে থাকা আ জ ম নাছির নেমে এসে তার অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারী ছাত্রলীগ নেতারাও সংবাদকর্মীদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন।
পরে আ জ ম নাছির সাংবাদিকদের বলেন, “এই ঘটনায় দলীয় বৈঠকে দোষীদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেব।”
হামলার প্রতিবাদে সংবাদকর্মীরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে তাৎক্ষণিক সমাবেশ করে।
এদিকে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এজাজ ইউসুফী, সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস এবং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার ও সাধারণ সম্পাদক মহসীন চৌধুরী।
0 Comment