স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। জয়ের জন্য স্কটল্যান্ডের ছুড়ে দেয়া ৩১৯ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে সৌম্য সরকারের উইকেট হারিয়ে কিছুটা বিপর্যয়ে পড়লেও পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় ছয় উইকেটের বড় জয় পায় টাইগাররা। এর ফলে গ্রুপ পর্ব পেরোনোর রাস্তাটা অনেকটা সুগম করলো মাশরাফিবাহিনী।

দুর্দান্ত এই জয়ে ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে বেশি রান তাড়া করে জয়ের নতুন রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ। এর আগে ৩১৩ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল টাইগারদের।

বৃহস্পতিবার নেলসনের স্যাক্সটন ওভালে স্কটল্যান্ডের ছুড়ে দেয়া ৩১৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে মাঠে নামেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার।

ফিল্ডিং করার সময় কাঁধে আঘাত পাওয়ায় এনামুল হক বিজয়ের পরিবর্তে সৌম্যকে নামানো হয় ইনিংস ওপেন করতে।

দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলেই জস ডেভির লেগ সাইডের একটি বল খোঁচা মারতে কট বিহাইন্ড হয়ে যান তিনি। উইকেট হারানোর আগে করেন ২ রান।

এরপর এই চাপ সামাল দেয়ার দায়িত্ব নেন তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দুজন সতর্ক শুরু করলেও পরে আস্তে আস্তে তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দলীয় রান। মূলত এই দুজনের জুটিতেই বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন বোনা শুরু হয়।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৩৯ রান যোগ করে দলীয় ১৪৪ রানে মাহমুদুল্লাহ আউট হন। কিন্তু তার আগে খেলেন ৬২ রানের মূল্যবান একটি ইনিংস। এটি ছিল তার ১২তম অর্ধশতক। ৬২ বলে করা তার ইনিংসে ছিল ছয়টি চার ও একটি ছয়ের মার।

এরপর তামিমের সঙ্গে যোগ দেন মুশফিক রহিম। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে সেঞ্চুরির পথে এগোতে থাকেন তামিম।

কিন্তু দলীয় ২০১ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৯৫ রানে তামিম এলবিডব্লিউ হয়ে গেলে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি অধরাই থেকে যায় তার। এবারও জস ডেভির বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তামিম।

এর ফলে বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরির দেখতে অপেক্ষার পালাটা আরো দীর্ঘ হলো। তবে সেঞ্চুরি করতে না পারলেও বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা নিজের করে নিয়েছেন তামিম।

আগের রেকর্ডটি ছিল ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের। তার গড়া ৮৭ রানের রেকর্ড ভেঙে তামিম করেন ৯৫ রান। ১০০ বলে ৯৫ রান করা তামিমের ইনিংসে ছিল নয়টি চার ও একটি ছয়। এটি ছিল তার ২৮তম অর্ধশতক।

তামিমের আউটের পর বাংলাদেশ দলের ত্রাণকর্তা হিসাবে আবির্ভূত হন সাকিব-তামিম জুটি। মুশফিক বলের চেয়ে বেশি গতিতে রান তোলায় মনোযোগী হয়ে পড়েন। উইকেটের চতুর্দিকে চালাতে থাকেন ব্যাট। ছয় চার ও দুই ছক্কায় মাত্র ৪২ বলে ৬০ রান করে বাংলাদেশ দলকে চাপমুক্ত করে আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।

পরে বাকি কাজটুকু সারেন সাকিব-সাব্বির জুটি। এই জুটি অবিচ্ছিন্ন থেকে ৭৫ রানের মূল্যবান পার্টনারশিপ উপহার দিয়ে বাংলাদেশকে আনন্দের সাগরে ভাসিয়ে বিশাল জয় উপহার দেন। বেশি রান তাড়া করে বাংলাদেশের এটি বড় জয়।

সাকিব তুলে নেন তার অর্ধশতক। পাঁচটি চার ও একটি ছক্কায় ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। এছাড়া সাব্বির চারটি চার ও দুটি ছক্কায় ৪২ বলে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ৩১৮ রান করে স্কটল্যান্ড।

স্কটল্যান্ডের শুরুটা ভালো হয়নি। তৃতীয় ওভারেই ক্যালাম ম্যাকলয়েডকে হারায় তারা। মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে কাভারে মাহমুদুল্লাহর হাতে ধরা পড়েন ম্যাকলয়েড।

দশম ওভারে আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। হ্যামিশ গার্ডিনারকে সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত করেন এই তরুণ পেসার।

৩৮ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া স্কটল্যান্ড প্রতিরোধ গড়ে কোয়েটজার ও ম্যাট মাচানের ব্যাটে। তৃতীয় উইকেটে ৭৮ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে।

প্রথমবারের মতো বল করতে এসেই ১৪.১ ওভার স্থায়ী জুটি ভাঙেন সাব্বির রহমান। মাচানের ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ওয়ানডেতে নিজের প্রথম উইকেট নেন এই লেগস্পিনার।

চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক প্রেস্টন মমসেনের সঙ্গে কোয়েটজারের ১৪১ রানের দারুণ জুটিকে বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যায় স্কটল্যান্ড। ৩৮ বলে ৩৯ রান করে মমসেন নাসির হোসেনের শিকারে পরিণত হলে ভাঙে ১৮.৫ ওভারের স্থায়ী বিপজ্জনক জুটি।

নাসিরের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১৫৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন কোয়েটজার। বিশ্বকাপের ইতিহাসে স্কটল্যান্ডের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক করেন এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।

বিশ্বকাপে সহযোগী দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দেড়শ’ করার কৃতিত্ব দেখান কোয়েটজার। তার ১৩৪ বলের ইনিংসটি ১৭টি চার ও ৪টি ছক্কা সমৃদ্ধ।

ম্যাথু ক্রসের সঙ্গে অ্যান্ডি বেরিংটনের ৩৯ রানের জুটিতে তিনশ’ রান পার হয় স্কল্যান্ডের সংগ্রহ। ১৬ বলে ২৬ রান করা বেরিংটনকে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি করে নিজের দ্বিতীয় উইকেট নেন তাসকিন।

তাসকিনের সেই ওভারের প্রথম বলে জীবন পেলেও শেষ বলে আর পারেননি ক্রস। সাব্বির রহমানের ক্যাচে পরিণত হয়ে বিদায় নেন তিনি। ৪৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তাসকিনই বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার।

এছাড়া নাসির হোসেন দুটি উইকেট পান। সাকিব আল হাসান, মাশরাফি ও সাব্বির পান একটি করে উইকেট।