ঢাকায় প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা টেন্ডারের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ, আহত ৮
প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা টেন্ডারের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও মুহুর্মুহু গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার ভর দুপুরে খোদ রাজধানীতে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়সংলগ্ন বিদ্যুৎ ভবনে পুলিশের উপস্থিতিতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণে ভবন ও আশপাশের এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আধা ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলাকালে টেন্ডারবাজদের গুলি ও বোমায় ৮ জন আহতসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি সরকারি গাড়ি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) অধীনে তেজগাঁও সাবস্টেশন ও মাদারটেক সাবস্টেশনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের ৪২ লাখ ও ৩১ লাখ টাকার দুটি দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। দরপত্র জমা দেয়ার সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশংকা মাথায় রেখে সকাল থেকেই বিদ্যুৎ ভবন ঘিরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সাদা পোশাকে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা সক্রিয় ছিলেন। বিদ্যুৎ ভবনের দ্বিতীয় তলায় যেখানে টেন্ডার বক্সটি রাখা ছিল সেখানেও পুলিশ সদস্যদের সরব উপস্থিতি ছিল। এছাড়া টেন্ডার দাখিলের শেষ দিন হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. আহমেদ কায়কাউসও ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণে এসেছিলেন। তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও ছিলেন। কিন্তু দুপুর ১২টার দিকে দরপত্র জমা দিতে আসা কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে হঠাৎ হাতাহাতি থেকে মুহূর্তের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বেধে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে বিদ্যুৎ ভবনসংলগ্ন পরিবহন পুলের সামনের রাস্তায় ফ্ল্যাক্সিলোড দোকানি সিরাজ যুগান্তরকে বলেন, ‘হঠাৎ সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেটের সামনে ও বিদ্যুৎ ভবনের নিচতলায় কয়েকটি হাতবোমার শব্দে শুনে আমি আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ি। ভয়ে দোকান খোলা রেখেই পালিয়ে যায়।’ অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী ফুটপাতের ডাব বিক্রেতা মনির জানান, বোমার শব্দ ছাড়াও বিদ্যুৎ ভবনের ভেতর থেকে থেমে থেমে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ তিনি শুনেছেন।
সংঘর্ষের বর্ণনা দিতে গিয়ে বিদ্যুৎ ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় একপক্ষ আরেকপক্ষের দিকে ফুলের টব ও বিভিন্ন আসবাবপত্র ভেঙে ছুড়ে মারে। এ সময় পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও তারা কাউকে কিছু বলেননি। বরং কয়েকজন পুলিশকে তিনি ঘটনাস্থল থেকে দূরে সরে যেতে দেখেছেন। তিনি আরও জানান, প্রায় আধঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষের একপর্যায়ে শেষে আসা গ্রুপটি (মদিনা গ্রুপের পক্ষে আসা যুবকরা) পশ্চিম পাশের দেয়াল টপকিয়ে আবদুল গনি রোড দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। সচিবালয়ের পত্রবহন শাখার সামনে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আমরা বসেছিলাম। ছাদের সামনে হঠাৎ বোমার শব্দে আমরা চমকে যাই। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন পুল ভবনের সামনে আরেকটি হাতবোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।’
জানা গেছে, সংঘর্ষ চলাকালে ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত পার্কিংয়ে থাকা বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসের পাজেরো গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৬২৩৩) ও বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী সোলায়মানের গাড়িতে কয়েকটি গুলি লাগে। এছাড়া ভাংচুর করা হয় আরও কয়েকটি গাড়ি। মুহুর্মুহু গুলি ও বোমার শব্দে এ সময় বিদ্যুৎ ভবনসহ আশপাশের এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার যখন সচিবালয়ের বিস্ফোরণ ঘটে, তখন কাছেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও প্রেস ক্লাবসহ আশপাশের সড়কগুলোতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিজয় উদযাপনে বিভিন্ন সংগঠনের আনন্দ মিছিল চলছিল।
পুলিশ ও দলীয় সূত্র জানায়, মতিঝিল এলাকার যুবলীগ নেতা আরিফ টিটু ও রমনা এলাকার ছাত্রলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে উজ্জ্বল, আনিস, ইকবাল, শাকিল ও মামুন নামে পাঁচজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসপাতাল থেকে মামুনকে আটক করে। পুলিশি অভিযানের খবর পেয়ে বাকি চার টেন্ডারবাজ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। আটককৃত মামুন যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ গ্র“পের বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিপিডিসির প্রধান প্রকৌশলী দিলীপ কুমার সেন জানান, তিনি গুলির কথা শুনেছেন। তবে তাদের অফিসে কোনো গোলাগুলি হয়নি।
উল্লেখ্য, ডিপিডিসির অফিস বিদ্যুৎ ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থিত। শাহবাগ থানার ওসি-তদন্ত মো. সাইদুল বলেন, বিদ্যুৎ অফিসে টেন্ডারবাজির ঘটনায় মামুন নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
0 Comment